(তৃতীয় পর্ব)
ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যচর্চায় নিজস্ব নৃত্যধারা গড়ে তুলেছেন। ভরতনাট্যম, ওড়িশি, রাশিয়ান ব্যালে বিভিন্ন ঘরানার নৃত্য তাঁর নৃত্যশৈলীতে এসে মিশেছে স্বতন্ত্র রসায়নে। নৃত্যনির্মিতি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা তাঁর অভ্যেস। তবে সেটাই তাঁর একমাত্র কাজ নয়। তিনি সাধারণ মানুষের মধ্যে লুপ্ত থাকা নাচের ছন্দটি দেখতে পেয়েছেন অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে। তালভঙ্গের জীবনকে সুরে-তালে-লয়ে ভরিয়ে দিয়েছেন। আজ মানুষ তাঁকে চেনে পশ্চিমবঙ্গ সংশোধনাগারের বন্দিদের জীবনকে ছন্দে ফিরিয়ে দেওয়া একজন অসাধারণ মানুষ হিসেবে।
শিল্পী অলকানন্দা রায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন ‘শনিবারের চিঠি’র প্রতিনিধি পাপিয়া চৌধুরী।
এই সাক্ষাৎকারের সমাপ্তি পর্বে পৌঁছে একটা কথাই মনে হয়, অলকানন্দা রায়, অন্ধকারের মানুষদের জীবনে শুধু আলোর প্রদীপই জ্বালেননি, নিজের স্নেহের আঁচল দিয়ে আড়াল করে রেখেছিলেন সেই আলো। তাই তো সেই ‘আলোকিত’ মানুষগুলো তাই নিজেদের মনের গোপনকুঠুরি অনায়াসে খুলে দিতে পারতেন তাদের ‘মা’র কাছে। শুধু এই দেশেই নয়, বিদেশেও গিয়েও নিজস্ব ঘরানার নৃত্যশৈলীতে, কস্টিউম পরিকল্পনার অভিনবত্বে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। শাড়ি আর পাগড়ির ফিউশনে সৃষ্টি করেছেন নিজের স্টাইল স্টেটমেন্ট। এইসব অলকানন্দার সৃজনী প্রতিভা। তবে তাঁর অমর সৃষ্টি পাথর চাপা রুক্ষ মাটিতে শিল্পের ফুল ফোটানো। যেখানে তিনি আজীবন করে চলেছেন জলসিঞ্চন। আর তাতেই ‘হৃদি ভেসে গেছে অলকানন্দা জলে’।
আমি তোমাদেরই লোক
প্রথম দিকে ওদের সঙ্গেই বাসে যেতাম। ওর পাশে বসে যেতাম, আর একটি ছেলে ছিল, সে পরে সুইসাইড করে, ওই দু’জন দুষ্টু ছিল। কিন্তু কখনও কিছু অন্যরকম করেনি, যাতে আমার মাথা নত হয়। বিদেশের প্রিজনে গিয়ে তো অনেকদিন ছিলাম না, কিন্তু যাওয়া মাত্র ওদের অ্যাকসেপ্টনেসটা ছিল খুবই স্পর্শকাতর। মুহূর্ত মধ্যের প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই মধুর। ফিরে আসার পরও যিনি ওখানে নাটক করাতেন, তার ফোন থেকে মেসেজ পাঠাত। বলতো, আবার এসো, লাভ ইউ মামমা।
আবার পণ্ডিচেরির জেলের স্মৃতি খুব অদ্ভুত। ভাষা অন্তরায় হয়নি কখনও, ওরা তামিলে বলছে, আমি ইংরেজিতে, হাত-পা নেড়ে নাচ বোঝাতাম। ওরা বুঝতোও, আম্মা বলতো। ‘যার কাছে অ্যাটেনশন ও অ্যাফেকশন পাবে, মানুষ তার কাছেই যাবে।’ ওখানে একটি ছেলে ছিল বাঙালি, কিন্তু বাংলা প্রায় ভুলেই গেছে। তামিল ভাষাটা বুঝিয়ে দিত। তুলসী পাতা-টাতা দিয়ে করোনা চা করতো, বলতো— এখানে একমাত্র বাঙালি আমি, আমায় কিন্তু বাদ দিয়ে দেবেন না। (হেসে) আরও কিছু অভিজ্ঞতার কথা ‘জেল জননী’ জানায় — আরও একটি ছেলে ছিল, সে ভাঙা ভাঙা ইংরেজি বলতে পারত, প্যারোলে ছাড়া পেলে ফোন করে বলত, মা, বিয়ে করবো, একটা হিন্দি মেয়ে দেখে দাও। অর্থাৎ অন্ধ্র্রর নয়, ওর থেকে উচ্চতর, হিন্দিভাষী। তাই এই আবদার। প্রায় রোজ ফোন। ভাবলাম, এটাও বুঝি বাকি আছে। একটা ইমোশানাল কানেকশন ঘটে, নাচটা একটা টুল, কারণ ওরা কেউ ড্যান্সার নয়। একটা ফিল ফ্যাক্টর নিয়ে চলা। ওদের যে এত সৃজনী নিপুণতা, আগে জানা ছিল না। যখন একটা পদ্মফুল বানিয়ে আনল, অভিভূত হওয়ার মতো। ঢাক যে বাজায় সেটাও তার এবং কাপড় দিয়ে তৈরি করে। ঢাকের পেখমটা, যেটা দুধের প্যাকেট দিয়ে বানানো, ময়ুর, রাজহাঁস, সবই এতই রিয়েল। কোনও অনুষ্ঠান একটা যেন বিয়েবাড়ির মতো, জাঁকজমকপূর্ণ কাজ করে সবাই। কেউ এটা ওটা বানাচ্ছে, রোদে শুকোচ্ছে, ইস্ত্রি করছে, খুবই উত্তেজিত থাকে ও আগ্রহ ভরে করে। লোকের চাহিদা বেড়েছে, ধৈর্য্য কমেছে, সোসাইটির প্যাটার্ন বদলে যাচ্ছে, বেকারত্ব বাড়ছে, সোস্যাল মিডিয়ার প্রভাব পড়ছে। কনজিউমারিজম। সবকিছু চাই ও অ্যাভেলেবল থাকতে হবে। না পেলে ভুল কিছু করে ফেলে। রিলেশনশিপের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়ছে। চাহিদাগুলো খুব মেটিরিয়্যাললিস্টিক হয়ে যাচ্ছে। সেন্স অফ কমিটমেন্টগুলো কমে যাচ্ছে। ফেমিনিস্ট নই, কিন্তু দেখছি মেয়েরা – ‘দে ওয়ান্ট টু বি এ ম্যান, অ্যান্ড এ উওমেন, দে ওয়ান্ট প্রিভিলেজেস অফ ম্যান এ্যান্ড উওমেন এজ ওয়েল।’ মূল্যবোধ হারিয়ে গেছে। একটা ইমব্যালান্স হয়ে যাচ্ছে।

দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে
এখন ভোগতন্ত্রর আঙিনায় ভালবাসা ও অনুভূতিও যেন কেনা যায়। ‘মনে হয়, প্রত্যেকেরই যেন কিছু নির্দিষ্ট শখ থাকে। সাংস্কৃতিক কার্যকলাপে জড়িত ও আগ্রহ থাকলে অপরাধপ্রবণতাকে কমানো যায়। যে কোনও সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ একটা ব্যথানাশক বামের মতো কাজ করে মনের উপর। ধীরে ধীরে আচরণেও প্রকাশ পায়। যে যাই করুক তার মধ্যেই প্রতিফলিত হয়। ক্রাইম কমানোর জন্য ছোটবেলা থেকেই শিশুদের ছেলে মেয়ে উভয়কেই গাইড ও কাউন্সেলিং করানো আবশ্যক। ছেলেদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে স্কুলে বলি,–তোমাদের অনুভূতিগুলো চেপে রেখো না, দয়া করে কেঁদো্। যখন খারাপ লাগবে, তখন কাঁদবে।’
চন্দননগর থেকে এক ভদ্রমহিলা ফোনে বলে, প্লিজ সেভ মি, কিচ্ছু ভালো লাগছে না, বাঁচতে চাই না, আবার মরতেও চাই না, মনে হচ্ছে জীবন যেন শেষ করে ফেলি। তাঁকে চেনা নেই, জানা নেই, রাত তখন বারোটা। কথা বলে চললাম প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে, তাঁর সঙ্গে। আস্তে আস্তে তিনি শান্ত হলেন। এমনও ঘটনা ঘটে। নেগেটিভিটিটা পজিটিভ ওয়েভে ফিরল। সাইক্রিয়াটিস্টদের ন্যাশনাল কনফারেন্স-এ গিয়ে ডাক্তারের মধ্যে বলতে গিয়ে অন্তর থেকে যা মনে এল বলাতে, একজন ডাক্তার ভোট অফ থ্যাঙ্কস-এর সময় বলেন,— অনেক কিছু শিখলাম আজ ডাক্তাররা। তিনি নিজেও একজন রিনাউন্ড সাইক্রিয়াটিস্ট। মনের বাইসেকটিং ও ডাইসেকটিং করতে করতে আমরা ভুলে যাই যে হৃদয় বলেও কিছু আছে। আবেগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা শুনে খুবই ভালো লাগলো এবং এটা সত্যিই। অনেক সময়ে পুঁথিগত বিদ্যাতে থাকে না, অন্তরস্থল ও আবেগেই আসে। ঈশ্বর আমাকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছেন, তাঁর কাজ আমায় দিয়ে করাচ্ছেন, নিজেকে খুবই ব্লেসড মনে হয়। কখনও মনে হয় না নিজে কিছু করছি, তিনি করাচ্ছেন, তাই করতে পারছি। ওয়েলদি নই তবে রিচ, সেটা অভিজ্ঞতায়, আশীর্বাদে।

আমাকে আমার মতো থাকতে দাও
বেচারা হয়ে কখনও বাঁচতে চাইনি, চন্দন অল্প বয়সে চলে গেলেও দুটো বাচ্চাকে নিয়ে বেচারা হয়ে বাঁচতে হয়নি, বাচ্চাদেরও বেচারা হয়ে বাঁচতে দিইনি। নিজের দুঃখের কথা কখনও কারওর কাছে প্রকাশ করিনি, কারণ সেটা একেবারেই আমার নিজস্ব। সবাই বলে নিজের স্টাইল ধরে রাখা, পোশাক ও হেয়ার স্টাইল নিয়ে–গতানুগতিক থেকে স্বতন্ত্রতার দিকেই ঝোঁক বেশি বা ক্রেজি ক্রিয়েটিভিটি (হেসে)। কাউকে অনুকরণ না করে চলা। অনেক সুন্দর সুন্দর উত্তরীয় পেয়ে, সেগুলোই কাজে লাগানো মাথায় বেঁধে। শাড়ির সঙ্গে কেউ পাগড়ি পরে না। আমার ভালো লাগে ও পরি, সবাই সেটা ভালই বলে। এটা একটা সিগনেচার হয়ে গেছে। নাচের কস্টিউমও একটু অন্য ডিজাইনের বা গয়নাও অন্যরকম করে পরতে পছন্দ। শাস্ত্রীয় নৃত্যের অভিনয়েও খুব স্বাভাবিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছি।
রবীন্দ্রনৃত্যের ক্ষেত্রে ফুলের গয়না, তাও সূর্যমুখী ফুল বা পদ্মফুলের গহনা পরেছি একসময়। সবাই বলে আমার একটা নৃত্যশৈলী আছে, ভাবি কী সেটা। ছোটবেলায় ব্যালে শিখেই শরীরের উপর দিকটা হাতের মুভমেন্টগুলোতে ব্যালের প্রভাব আছে, আর ফুটওয়ার্ক ওড়িশির। এই দুইয়ের সংমিশ্রণেই একটা স্টাইল। এক্সপ্রেশনের ক্ষেত্রেও কোনও রিজিডনেস নেই, সাবলীল, স্বাভাবিক। লোকের ভাল লাগা নিয়ে চিন্তা করি না, নিজের ভাললাগা ও আনন্দেই নাচি এইভাবে। কখনও কোনও কিছু খুঁজে পাই না, এত অগোছালো, তাই যা সামনে পাই সেই দিয়ে কিছু ক্রিয়েট করা। ব্লাউজ না পরে, কামিজ পরে শাড়ি পরলে, সবাই তারিফও করছে। বলে, ফ্যাশনেবল লাগে। পুরোটাই পাগলামি। কোনওদিন কিছু কিনি না, সব পাওয়া শাড়ি। ছাঁচে ফেলা সন্দেশ, সেটা কখনও হতে চাইনি। তাই অলওয়েজ ট্রাই টু ক্রিয়েট ‘হাটকে’। নিজের নাচের ভিডিও দেখতে ভালো লাগে না, বোরিং লাগে।

সত্তর বছরের নৃত্য সফরে নানান ঘটনাও আছে। বিদেশে গেছি, প্রোগ্রামে প্রায় একমাসের জন্য বীরেন্দ্র শংকরের ওখানে, কস্টিউম ধুতে দিয়ে আনা হয়েছে, ব্লাউজ তো লন্ড্রিতে পাঠানো হয় না। পাঁচটা কস্টিউম নিয়ে গেছি, দুটো কস্টিউমের ব্লাউজ গেল আর তিনটের নেই, ভুলে বাড়িতে রয়ে গেছে। ওখানে গিয়ে ইনভেন্ট করলাম স্কিভিস যেটা পরেই কস্টিউম পরলাম আর নাচলাম। প্রথম ওড়িশি মঞ্চ প্রবেশে ওড়িশি ফেস্টিভ্যাল- এ সংযুক্তাদির কস্টিউম, গহনা, জগন্নাথ দিয়ে নাচ করেছিলাম। তখন তার গুরুত্ব ও মূল্য বুঝিনি এখন সেটা উপলব্ধি করি। দিদি মন্দিরায়, গুরুজি (কেলুচরণ মহাপাত্র) পাখোয়াজে, গানে রঘুনাথ পানিগ্রাহীজি। দিদি ইনট্রোডিউস করান, যদিও তখন আমি বেশ পরিচিত নৃত্যশিল্পী। জীবনে কখনও ফিজ্ নিয়ে নাচিনি, তাই বোধহয় আমি এত স্বাধীন। রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য করার সময় শান্তিদার (বোস) সঙ্গে খুবই আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল মঞ্চে। উনি কিছু ভুল করলেও আমি মিলিয়ে দিতাম, এতটাই জানতাম ওঁর স্টাইল বা কী মুভমেন্ট করবেন পরে। নাচটা খুব আনন্দ করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে করি। রিপিটেশন নেই, আমি খুব স্টেজ পার্সন। প্র্যাকটিস করতে ভালও লাগে না, করি না, তাই যখন নাচি সেটা মেক্যানিকাল না হয়ে অন্তর থেকে আবেগতাড়িত হয়ে ফোটে। আজ যেটা নাচি, কাল সেটা পাল্টাই, মঞ্চই সেই স্বাধীনতা দেয়। সেটাই বোধহয় আমার ইউএসপি। তাই কিপ অ্যাডিং।

আমার মুক্তি আলোয় আলোয়
গানটা ওদের শিখিয়েছিলাম, ওরা শান্তিনিকেতনে গেয়েছিল। মুক্তিটা জেলের বাইরে গেলেই নয়। ওদের বলি, স্টিল ইওর স্পিরিট ইজ ফ্রি, ইউ আর নট ফ্রি। আর আমার হলো মাঝখানের দুটো লাইন—‘আমার মুক্তি সর্বজনের মনের মাঝে, দুঃখ বিপদ তুচ্ছ করা কঠিন কাজে।’ সেটাই আমার মুক্তি। আই থিঙ্ক আই হ্যাভ ফাউন্ড মাই ফ্রিডম। ফ্রিডমটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা আমার কোনও কাজে ইন্সপায়ারড হন, সেখান থেকে ও তাঁদের থেকেই ইন্সপিরেশন পাই। অ্যাবাভ অল মাদার (শ্রীমা)। যখনই মনে হয়েছে, দুর আর ভালো লাগছে না, আর কিছু করব না, মা এমন কিছু ক্রিয়েট করেন, সেখানে ফিরে যাই ও কাজ করতে শুরু করি। তাই অনুভূতি ও উপলব্ধি এতটাই ব্যক্তিগত, শব্দ দিয়ে বলে বোঝাতে পারব না। শুধু জানি মা আছেন, এমনই অভিজ্ঞতা, তাই বোধহয় আমার এত সাহস।
বাল্মিকী প্রতিভার শততম শো রবীন্দ্রসদনে হবার পর লোকের চাহিদা থাকতে থাকতে বন্ধ করলাম। থামতে হয়। আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম, একশটা করে আর করবো না। এটা তিন নম্বর বাল্মিকী ছিল, তারপরও আর একজনকে পেয়েছিলাম। কিন্তু যতি কোথায় টানতে হবে সেটা জানতে হয়। সব কিছু ঠিক সময়ে শেষ করতে হয়। মনে হয় বাল্মিকী প্রতিভা যখন শেষ করলাম, তখন সেটা স্টিল অ্যাট পিকস্। সেঞ্চুরি হিট করে শেষ করেছি। খুব কষ্ট হয়েছে শেষ শো’তে। একটি ছেলে সে প্রথম থেকেই ছিল, বাকিরা সবাই ওভার টাইম এসেছে। অনুষ্ঠানের আগের দিন আমার কোলে মাথা রেখে খুব কাঁদছে আর বলছে– মা কোনওদিন ভাবিনি বাল্মিকী প্রতিভা আর হবে না। বললাম, সব কিছুরই একটা শুরু ও শেষ থাকে, কখন শেষ করতে হয় সেটা জানতে হবে। কোনও জিনিস কোনওমতে শেষ করবে না। আমরা সেটাই করেছি। এই ছেলেটি মেক্যানিকাল ডিপার্টমেন্টে কাজ করে। ধুনুচিগুলো ওরই তৈরি। সব মেটালের, নারকেলের ছোবার গুড়ো, ফেবিকল দিয়ে আটকে মাটির লুক আনার জন্য রাফ ব্যাপারটা আনে ও রঙ করে। ধুনুচির ভেতর থার্মোকল, ব্রাউন রং করা, তাতে ধূপের কাঠিগুলো গোজা থাকে যাতে তাপটা না লাগে। ও তিন নম্বর প্রথম দস্যু করেছে শেষ অনুষ্ঠানে। প্রথম ও দ্বিতীয়, প্রথম দস্যু মুক্তি পেয়েছে। এখন আমার কাজ হল ওদের বের করার চেষ্টা, চব্বিশ বছর ধরে আছে। নাচটা দিয়ে হয়তো ওদের শরীরের দিক থেকে উন্নতি হয়েছে। ভালবাসা দিয়ে বন্ডিং বা স্পিরিচ্যুয়ালি উত্তরণ ঘটায়। সবাই মিলে বসে মেডিটেশন হয়। সেখানে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিশ্চান সবাই থাকে একসঙ্গে। একটা মিউজিক চলে, গোল হয়ে বসা হয়, কোনও রিলিজিয়াস কিছু নয়, সবার গাল বেয়ে জল পড়ে। এটাতে অনেক ইমোশনকে বার করে আনে। অনেক সময় অনেকেই কিছু বলতে পারে না। আবেগটা বার করতে পারে না, সেই জন্য বলি ছেলেদের কাঁদতে, যখন কান্না পাবে। মেয়েরা যদি কাঁদতে পারে, তোমরাও কাঁদবে। নয়তো তার ফল ভাল হয় না। এরকম ঘটনা আছে– ছোটবেলায় এমন কিছু ঘটে, অ্যান্ড বিকাম এ রেপিস্ট। সে তার মাকে জিজ্ঞাসা করে, ছোটবেলায় তার সঙ্গে কী ঘটেছিল।
আমি শুধু তাদের রুটটা দেখি, কখনও পাল্টা জিজ্ঞাসা করি না, বলতে চাইলেও জানতে চাই না। ‘আই অ্যাকসেপ্ট দেম অ্যাজ দে আর। বিকজ দে আর মাই চিলড্রেন। আই লাভ দেম অ্যাজ দে আর।’ নাচটা ছিল বলেই ওদের সঙ্গে ব্রিজ আপ হয়েছে– একটা মাধ্যম, যা দিয়ে কিছু জীবনের রূপান্তর ঘটেছে। নাচ আমার কাছে শুধু হাত-পা নেড়ে পারফর্ম করা নয়। নাচ আমার কাছে স্ট্রেংথ এ্যান্ড পাওয়ার, সামথিং ফার ডিপার। ইট হেল্পিং মি, হোয়াট আই কুড ডু। নৃত্যই জীবনকে স্পর্শ করেছে এবং স্পর্শ করে চলেছে।
পর্ব ১ পড়তে হলে ক্লিক করুন।
পর্ব ২ পড়তে হলে ক্লিক করুন।